১২ বছরের শিশুকে বেঁধে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও দেখে মামলা দায়ের

১২ বছরের শিশুকে বেঁধে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও দেখে মামলা দায়ের
মো: ইমরুল হাসান, রংপুর জেলা প্রতিনিধি 

রংপুরের বদরগঞ্জে ১২ বছরের এক ছেলে শিশুকে ঘরের ভেতর বেঁধে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা দুই মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ডের  একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ছেলে শিশুটির বিরুদ্ধে তিন বছরের এক কন্যা শিশুকে শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগ উঠায় এ ঘটনা ঘটে। নির্মমভাবে পেটানোর ভাইরাল ভিডিও ফুটেজ দেখে ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করছেন নির্যাতিত শিশুটির বাবা।

আসামিরা হলেন, সুরুজ মিয়া, সজিব, খোকন মন্ডল, রোকন মন্ডল, মনদেল কেরানী ও আকমল হোসেন। যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠা ছেলে শিশুকে একটি অন্ধকার ঘরের ভেতরে বেঁধে রেখে লাঠি দিয়ে পেটানোর ঘটনার সঙ্গে ওই ছয়জন জড়িত বলে দাবি করা হচ্ছে। শনিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান।  

এর আগে নির্যাতনের শিকার ছেলে শিশুটির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করেছে নির্যাতনকারীরা। ওই মামলায় ছেলেটিকে আসামি করে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ পুলিশ খতিয়ে দেখছেন বলে ওসি জানান।

জানা গেছে, গত শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের অরুন্নেছায় বাড়ির পাশে শিশুরা সবাই একসঙ্গে খেলা করছিল। এ সময় তিন বছরের এক কন্যাশিশুর শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগে উঠে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছেলের বিরুদ্ধে। পরে ছেলেটিকে তার বোনের বাড়ি থেকে ধরে এনে একটা অন্ধকার ঘরের ভেতরে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। পুলিশ তড়িঘড়ি করে ছেলেটিকে যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেন।

এরই মধ্যে অন্ধকার ঘরের ভেতর ছেলেটিকে শারীরিক নির্যাতন করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। এ ঘটনার সাতদিন পর শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাতে নির্যাতনের শিকার ছেলেটির বাবা মামলা করেন।

নির্যাতিত শিশুটির বাবা মোকতার হোসেন জানান, গত শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে মার্বেল খেলার সময় প্রতিবেশী এক ব্যক্তির তিন বছর বয়সী মেয়ে শিশুকে থাপ্পড় দেয় তার ছেলে। এ নিয়ে মেয়ে শিশুর পরিবার থেকে শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়। পরিবেশ ঘোলাটে হলে ভয়ে পালিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে ওঠে সে। একপর্যায়ে তার অবস্থান জানতে পেরে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেন প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি ও তার লোকজন। এর পেছনে স্থানীয় কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ইন্ধন রয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, তার ছেলে শিশুকে একটি অন্ধকার ঘরের ভেতর হাত-পা বেঁধে কয়েক দফায় নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে তারা ছেলের গোপনাঙ্গসহ জিহ্বার নিচ দিয়ে কলম দিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। পানি পানি বলে চিৎকার করলে নির্যাতনকারীরা অন্য শিশুদের দেয়া প্রস্রাব খেতে দেয়। পূর্ব শত্রুতার জেরে একই গ্রামের প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

মারপিটের অভিযোগের বিষয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। তবে ভিডিওতে কে কে আছে সেটি স্পষ্ট নয়। তবে তার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় ইন্ধন থাকার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন।

এদিকে বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রেফতার হওয়া নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অন্যান্য অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post