দুই সন্তান নিয়ে পারুলের আহাজারি



মো : সাইদুল ইসলাম সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)প্রতিনিধি 
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ৩ বছর যাবৎ পাষণ্ড স্বামী দেখভাল না করায় অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সন্তানের জননী পারুল আক্তার (২৮)। পারুল আক্তার সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ভূমদক্ষিণ গ্রামের প্রবাসী নৈমুদ্দিনের মেয়ে। অপরদিকে পাষণ্ড স্বামী একই উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের চরশ্যামনগর গ্রামের আয়নাল কাজীর ছেলে প্রবাসী শহিদুল ইসলাম। তিন বছর যাবৎ বাবার বাড়ির খাদ্যসামগ্রী পেয়ে নিষ্পাপ দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্বামী ফিরে আসবে এমনপ্রত্যাশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন পারুল। অন্যদিকে দুই মাস যাবৎ প্রবাস ফেরত স্বামী শহিদুল ঠিক তার উল্টো চিন্তাভাবনা নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে স্ত্রীকে তাড়িয়ে দিতে নানাবিধ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান ভুক্তোভুগী পারুল ও তার পরিবার।

জানা গেছে, ২০১০ সালে ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী পারিবারিকভাবে পারুল আক্তার ও শহিদুলের বিবাহ হয়। এরপর ওবায়দুল্লাহ (১০) ও লামিয়া (৫) নামে দুটি ছেলে-মেয়ে আসে তাদের সংসারে। শহিদুল প্রবাসে চাকরি করছে এবং নিয়মিত দেশে ছুটিতেও আসছিল। ৫-৬ বছর ভালো কাটলেও তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বাড়িসংলগ্ন খাস জমি স্বামী-স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করবে মর্মে সহজ-সরল স্ত্রী পারুলের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও ছবি সংগ্রহ করে মাস্টারমাইন্ড পরিকল্পনা করে ধূর্তবাজ স্বামী শহিদুল। পরে পারুলের স্বাক্ষর ও ছবি কাজে লাগিয়ে আদালতে গিয়ে তারা উভয়ে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছে- এমনটা দেখায়। যদিও এগুলোর কিছুই জানেন না সহজ-সরল পারুল। পারুলকে নিজ বাড়িতে না রেখে কৌশলে একই উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের হাটখোলা বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে রেখে নিরাপদে যাতায়াত করত ভণ্ড স্বামী শহিদুল।

পারুলকে তালাক দিয়ে পুনরায় তার বাড়িতে যাতায়াত করছে- এমন খবর হাটখোলা এলাকার লোকজন জানতে পেরে পুনরায় ১০ লাখ টাকার দেনমোহর ধার্য করে তাদের বিবাহ দিয়ে দেন। এফিডেভিটে শহিদুল স্বীকার করে যে, ৬ লাখ টাকা ধার দিয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে নেয় সে। পুনরায় শহিদুল স্ত্রীর মর্য়াদা দিতে গড়িমসি করলে জয়মন্টপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শাহাদৎ হোসেন তার নিজ বাড়িতে এ বিষয়ে গ্রাম্য ঘরোয়া সারিশে মীমাংসা করে দিয়ে শান্তিতে বসবাসের মৌখিক চুক্তি করে শহিদুল। অতঃপর কাউকে না জানিয়ে বিদেশ চলে যায় শহিদুল।

মানিকগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে পারুলের পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে শহিদুলের পক্ষ হতে তার ভাই এমদাদুর রহমান ওই কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আপস মীমাংসায় শর্ত মেনে সই করেন। এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর সম্প্রতি সিংগাইর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পারুলের মা হালিমা বেগম। সেখানেও ধার্য তারিখে আসেনি শহিদুল।

এদিকে, এ বিষয়ে জানতে শহিদুলের এলাকা চরশ্যামনগর গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। যদিও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা রওশন আশ্বস্ত করে বলেন, বাদীপক্ষ বলেছে সায়েস্তা ইউপি চেয়ারম্যান নাকি উভয়কে ডেকেছে আপসের উদ্দেশ্যে। সেখানে মীমাংসা না হলে আমরা বাদীপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রত্যয়নপত্র লিখে দেব।

Post a Comment

Previous Post Next Post