মো: ইমরুল হাসান, রংপুর জেলা প্রতিনিধি:
দীর্ঘদিন ধরে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের যমুনেশ্বরী নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসলেও এ অঞ্চলের মানুষের সে দাবি এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। সেখানে একটি মাত্র নৌকা দিয়ে ১৬ টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কয়েক যুগ ধরে চলাচল করে। এবং চরম ঝুঁকি নিয়ে তাদের নৌকায় চলাচল করতে হয়। দুঃখ-কষ্টকে ভাগ্যের লিখন ভেবে নৌকা দিয়ে পারাপারের মধ্যেই জীবন-জীবিকা চলছে তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে যমুনেশ্বরী নদী। হরেকৃষ্ণপুর মাঝিপাড়া ঘাটে নদীর ওপর একটি মাত্র নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বালুয়া মাসিমপুর ও বড়বালা ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের মানুষ। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এছাড়া কৃষি পণ্য সামগ্রী পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় কৃষকদের। হরেকৃষ্ণপুর, আটপুনিয়া, একডালা, তরফবাহাদী, তরফ গঙ্গারামপুর, চরমুকিমপুর, সালদারপুর, কেশবপুর, আমেশ্বরপুর, ভাটারপাড়া, রঘুনাথপুর, তরফশাদী, কাজিরপাড়া, খিয়ারপাড়া, ফকিরপাড়া, কুড়ারপাড়া গ্রামসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতের ভরসা একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো।
পথচারী লক্ষনচন্দ্র বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে একটি মাত্র নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হই। রাতের বেলা চলাচলে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি ব্রিজের। স্থানীয় এমপি একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কয়েক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি।’
কৃষক আব্দুল জোব্বার মিয়া বলেন, ‘নদীর ওপারে আমার আবাদি জমি আছে। খুব কষ্ট করে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছি।’
বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
কেশবপুর বাজারের ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে কোন ভারি পণ্য নিয়ে আসতে হলে ছড়ান বাজার হয়ে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরে নিয়ে আসতে হয়। এতে যাতায়াতের খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। ব্রিজটি কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন না তারা। দিনের পর দিন আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।’
কেশবপুর বিএম কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনুর রহামান বলেন, ‘নদীর দু’ধারে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দুঃখ-কষ্টকে ভাগ্যের লিখন ভেবে দীর্ঘদিন ধরে নৌকা দিয়ে পারাপার করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে সেই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের দিক থেকে অন্যান্য এলাকার তুলনায় আমাদের এলাকা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসলেও আজ পর্যন্ত তা পূরণ হয়নি। হরেকৃষ্ণপুর মাঝিপাড়া ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
বালুয়া মাসিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল হক জানান, ওই স্থানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এলজিএডির মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী সদস্য বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।’
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ত আর শিক্ষা অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসার জন্য প্রয়োজন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। বালুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বালুয়া মাদ্রাসা, কেশবপুর মাদ্রাসা, কেশবপুর কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে নদীর দুপারে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম সময়ে যাওয়া আসার জন্য বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা নৌকা। এলাকাবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জরুরী ভিত্তিতে ব্রীজটি নির্মান করে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
Tags
দেশের খবর