বিয়ের মাত্র তিন মাস শ্বশুরবাড়িতে হত্যা তনুশ্রী

সদর উপজেলা প্রতিনীধি 

তনুশ্রীর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চৈল্লা গ্রামে। ওই গ্রামের দীনবন্ধু রায়ের ছোট মেয়ে তিনি। গত বছরের ৩ অক্টোবর পারিবারিকভাবে তনুশ্রীর বিয়ে হয় পৌর এলাকার বনগ্রাম এলাকার অটল বিশ্বাসের ছেলে অতনুর সঙ্গে। অতনু ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করেছে। বনগ্রাম এলাকার এবি ভিলা নামের ভবনে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন তনুশ্রী।

বিয়ের মাত্র তিন মাস পেরিয়েছে তনুশ্রী রায়ের (২১)। বাবার বাড়ির সুখস্মৃতি শ্বশুরবাড়িতে আরও বাড়তে পারত তাঁর। কিন্তু কয়েক মাস পরই নিথর শরীর নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরেছে এই তরুণী। বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ শহরের বনগ্রাম এলাকার স্বামীর বাসা থেকে তনুশ্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় স্বামী অতনু বিশ্বাসকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

মামলায় দীনবন্ধু রায় অভিযোগ করেছেন, বিয়ের পর থেকে নানা বিষয়ে তাঁর মেয়ে তনুশ্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন চালাতো তারা। 
দীনবন্ধু রায় শুক্রবার বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর মেয়ে তনুশ্রী। মোবাইল ফোনে তাদের কাছে আত্মহত্যা করবে বলেও জানিয়েছিল। কিন্তু তারা মেয়েকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন। 

দীনবন্ধুর ভাষ্য, তিনি একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপক। প্রতিবেশী বিমানবাহিনীর প্রকৌশলী নিরঞ্জন রায়ের প্রস্তাবে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেন। মেয়ের শ্বশুর অটল বিশ্বাস কৃষি বিভাগের সাবেক উপপরিচালক। অবস্থাসম্পন্ন পরিবার দেখেই বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। শুধু চেয়েছিলেন, মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে ভালো থাকবেন। তখন জানতেন না ছেলে বেকার ও উচ্ছৃঙ্খল। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে এভাবে মেয়েকে হারাতে হবে ভাবেননি তিনি।
বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, তাদের কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললেই তনুশ্রীর ওপর নেমে আসত নির্যাতন। বিয়ের দেড় মাস পর থেকে নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
তনুশ্রীর বান্ধবী মিম আক্তার বলেন, তনুশ্রীর মুখমণ্ডলসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। এর কারণ জানতে চাইলে তনুশ্রী জানাত, শুধু সন্দেহের কারণে নির্যাতন চালানো হতো। কলেজ থেকে বাড়ি যেতে একটু দেরি করলেই মারধরের শিকার হতে হতো তনুশ্রীকে। কোনো বান্ধবী বা পুরুষ আত্মীয়ের ফোনকল এলেও পেটানো হতো। 
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তনুশ্রী এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের পর নার্সিংয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের কেউ এতে রাজি হয়নি। এক বছর পর মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।  
দীনবন্ধু রায় বলেন, মেয়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই তিনি হত্যার জন্য সরাসরি মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের কথায় আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার বিষয় নিশ্চিত হলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে বলে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে সমাহিত করা হয়েছে। এ সময় শ্বশুরবাড়ির কোনো লোকজন আসেনি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমানুল্লাহর ভাষ্য, এ ঘটনায় তনুশ্রীর স্বামী অতনু বিশ্বাস, শ্বশুর অটল বিশ্বাস ও শাশুড়ি আরতী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন দীনবন্ধু রায়। পুলিশ অতনু বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post